পুরুষের যৌন দুর্বলতা

পুরুষের দুর্বলতা বলতে যৌন অক্ষমতা বা যৌন আচরণে অতৃপ্তি, যৌন অসন্তোষ ইত্যাদি বোঝানো হয়ে থাকে। মূলত যৌন আচরণের যে দিকটি পুরুষের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর তা হলো পুরুষাঙ্গ বা লিঙ্গের উত্থানে ব্যর্থতা। এটিকে আমরা অনেক সময় ইরেকটাইল ডিসফাংশন বলে থাকি। অবশ্য মেডিকেল টার্ম হিসেবে একে ইম্পোটেন্স বা পুরুষত্বহীনতাও বলা হয়ে থাকে। একজন পুরুষ যখন যৌন সঙ্গম বা যৌনমিলনের জন্য মনোশারীরিকভাবে প্রস্ততি লাভ করে তখন যদি তার লিঙ্গ বা পুরুষাঙ্গ সঙ্গমের জন্য উপযুক্তভাবে উত্থিন না হয় তবে তা তার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সন্তোষজনকভাবে সেক্স করার জন্য ইরেকশন বা লিঙ্গের পর্যাপ্ত উত্থান একটি বাধ্যতামূলক আচরণ। এর ফলশ্রুতিতে পুরুষের যৌন আগ্রহ বা যৌন ইচ্ছার যেমন ঘাটতি দেখা যায় তেমনি চরমপুলক অনুভূতি লাভও তার ভাগ্যে জোটে না। যে পুরুষ এর ভুক্তভোগী তিনিই কেবল জানেন এর কেমন মর্মপীড়া। অথচ মেডিকেল স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে পুরুষত্বহীনতার অনেক আধুনিক কার্যকারী চিকিৎসা রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে,ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা লিঙ্গ উত্থানজনিত নানা সমস্যা যে কোনো বয়সের পুরুষের ক্ষেত্রেই হতে পারে। হঠাৎ করে দুই একবার লিঙ্গ উত্থিন না হওয়া কোনো বড় সমস্যা নয় এটি আপনাআপনি দূর হয়ে যায়।
ফিজিশিয়ানরা সাধারণত ইম্পোটেন্স বা পুরুষত্বহীনতার টার্মটির পরিবর্তে ইরেকটাইল ডিসফাংশন টার্মটি বেশি ব্যবহার করে থাকেন , কেননা এটি ইম্পোটেন্সির চেয়েও অনেক ব্যাপক অর্থ বহন করে। পুরুষের যৌন কর্মের মানে যে কেবলমাত্র পুরুষাঙ্গের ইরেকশন বা উত্থান হওয়া তা কিন্তু নয় এর সঙ্গে মনোগত এবং আবেগজনিত অনেক ফ্যাক্টরই জড়িত। পুরুষত্বহীনতা শব্দটির সঙ্গে যেহেতু অনেক নেতিবাচক ধারণা জড়িত তাই ইরেকটাইল ডিসফাংশন টার্মটি আমরা ব্যবহার করব। শারীরিক বা দৈহিক নানা কারণে যেমন লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা হতে পারে ঠিক তেমনি মানসিক সমস্যার কারণে বা আবেগজনিত বা সাইকোসেক্সুয়াল (মানসিক যৌন সমস্যা) ইত্যাদির কারণেও পুরুষত্বহীনতা হতে পারে। যে কারণেই হোক না কেন ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয় হচ্ছে সবার আগে। সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার জন্য পুরুষত্বহীনতার জন্য উপযুক্ত কারণ খুজে বের করে তবেই তার চিকিৎসা করতে হবে। এ নিবন্ধে আমরা লিঙ্গ উত্থানজনিত নানা সমস্যা যেমন-
লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যার কারণ-
ইরেকশন প্রবলেমের জন্য মূলত দুই ধরনের কারণ দায়ী। ফিজিক্যাল বা শারীরিক কারন-
(এটি সাধারণত রক্তনালী সম্পর্কীয় বা নার্ভের সাথে সম্পর্কিত) সাইকোলজিক্যাল বা মনোগত কারণ ঃ- নানা ধরনের মানসিক বিকারজনিত কারণে পুরুষত্বহীনতা অনেকক্ষেত্রেই ঘটে থাকে।
আবার অনেকের লিঙ্গ উত্থানজনিত নানা সমস্যার পেচনে রক্তনালী, লার্ভ বা স্নায়ু, নানা ধরনের সাইকোলজিক্যাল বা মানসিক কারণজনিত ফ্যাক্টর দায়ী থাকতে পারে।
শারীরিক নানা কারণের মাঝে রয়েছে দীর্ঘ মেয়াদি অসুস্থতা, ইনজুরি বা আঘাত, অপারেশনজানত কারনে জটিলতা যেমন-প্রস্টেট সার্জারিজনিত সমস্যা ইত্যাদি। এসকল সমস্যার কারণে পেনিসে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্নায়ুবিক সংবেদী তাড়না ও রক্তপ্রবাহ বিঘ্নতা ঘটে থাকে। এখানে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন ইরেকশন হলো এক ধরনের ভাসকুলার বা রক্তনালীতে পর্যাপ্ত রক্ত সংবহনজনিত ঘটনা। যদি স্নায়ুতন্ত্র যৌনশিহরণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সিগন্যাল বা সংকেত পাঠাতে না পারে তাহলে পেনিসের রক্তনালীগুলোতে ইরেকশনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে রক্ত আসে না ফলে লিঙ্গ উত্থান ঘটে না। গবেষণা সমীক্ষায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, শতকরা ৪৮ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষত্বহীনতার মূল কারণ ভাসকুলারবা রক্তনালী সম্বন্ধীয় নানা সমস্যা শতকরা ১৪ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষত্বহীনতার ক্ষেত্রে নার্ভকে দায়ী করা হয়েছে। নানা ধরনের নিউরোলজিক বা স্নায়ুবিক সমস্যার কারণে যৌন অক্ষমতা ঘটতে পারে।
শতকরা ৩ ভাগ ক্ষেত্রে পেনিসের কাঠামো অথবা এর পার্শ্ববর্তী কোষকলাকে ইরেকশনের প্রবলেমের জন্য দায়ী করা হয়েছে।
কতক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত কারণে যেমন-যারা উচ্চ রক্তচাপবিরোধী ওষুধ সেবন বা করছেন বিষন্নতাবিরোধী ওষুধ সেবন করছেনতাদের ক্ষেত্রেও সাময়িক যৌন অক্ষমতা ঘটাতে পারে।
হরমোনাল ফ্যাক্টরস বা হরমোনের তারতম্যজনিত কারণে পুরুষত্বহীনতা শিকার অনেকেই হতে পারে।
জিষ্কের স্বল্পতাজনিত কারণে অনেকের পুরুষত্বহীনতা হতে পারে। সাধারণত শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষত্বহীনতার কারণ হিসেবে শারীরিক অসুস্থতাগুলোকেই দায়ী করা হয়ে থাকে। দৈহিক বা শারীরিক অসুস্থতার জন্য যেমন ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থানের সমস্যা হতে পারে। ঠিক তেমনি মনোগত নানা সমস্যায়ও যৌন অক্ষমতা হতেই পারে। এগুলোর মাঝে রয়েছে ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা এ্যাংজাইটি বা দুশ্চিন্তা, মনোদৈহিক চাপ বা স্ট্রেস, দীর্ঘমেয়াদি অনুশোচনাবোধ অথবা নারী-পুরুষের আন্তঃসম্পর্কজনিত নানা সমস্যা। এসকল নানা সমস্যায় যৌন সঙ্গম বা যৌনমিলনের সময় পুরুষ একটু অন্যমনস্ক হয়ে থাকে ফলে স্বাভাবিক যৌনতার জন্য যে শিহরণ লাভ করা উচিত তার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে যায়। ফলে ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থান ঘটে না।
সাইকোলজিক্যাল নানা সমস্যার জন্য শতকরা ৪০ ভাগেরও বেশি ক্ষেত্রে ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা হয়:
যেসব পুরুষের বয়স ৫০ বছরের নিচে তাদের ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যার মূল কারণ সাইকোলজিক্যাল বা মানসিক সমস্যা।
নারী – পুরুষের মাঝে আন্তঃসম্পর্কজনিত নানা দ্বন্দ্ব ,দাম্পত্য কলহ দুজনের সাঝে অন্তরঙ্গ সম্পর্কের অনুপস্থিতি,একজন আরেকজনের নিকট নানা ব্যক্তিগত বিষয় গোপন করা ইত্যাদি নানা কারণে যৌন পার্টনারদের মাঝেও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার এটাও ঠিক যে, কোনো পুরুষ যদি নির্দিষ্ট কোনো নারীর প্রতি যৌন আগ্রহ বা যৌন ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে তার ক্ষেত্রেও ইরেকশনের সমস্যা হতে পারে। যে পুরুষের হঠাৎ করে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে তারও লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা হতে পারে।
কতক পুরুষের আবার স্ত্রীর প্রথম সন্তান জন্মের পর সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে কতক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যার নানা উপসর্গ
পুরুষের পুরুষঙ্গ যখন উত্থিত না হয় তখন লিঙ্গ সম্পর্কীয় কতক উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে। এগুলো হলোঃ
কখন এ সমস্যা বেশি হয়
বেশিরভাগ পুরুষের প্রফেশনাল বা হঠাৎ করে দু-একবার লিঙ্গ উত্থানের সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এই লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা যখন দীর্ঘমেয়াদি রূপ লাভ করে এবং অব্যাহত থাকে তখনই তা ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের ওপরে এবং ব্যক্তির যৌন জীবনে নানা ধরনের শষ্কা ও নেতিবাচক অনুভূতির জন্ম দেয়। এখানে একটি কথা বিশেষভাবে বলা দরকার একবার যাদের লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা হয়ে পড়ে তারা বারবার মনে করতে থাকে পরের বার যৌনমিলনে সমস্যাটি বুঝি আবার হবে এই অতিরিক্ত আগাম যৌন দুশ্চিন্তার কারণে যৌনমিলনের সময় লিঙ্গ উত্থান নাও ঘটতে পারে একে আমরা বলি পারফরমেন্স এ্যাংজাইটি। এই এ্যাংজাইটিজনিত কারণে সমস্যা অনেক বেড়ে যেতে পারে। আবার অনেক পুরুষ রয়েছে যাদের যৌন সঙ্গমকালীন সময়ে লিঙ্গ ঠিকই উত্থিত হল কিন্তু বর্ধিত যৌন চাপের কারণে সাথে সাথেই বীর্যস্খলিত হয়ে গেল। এরও মূল কারণ এ্যাংজাইটি, এটাকে বলে প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশন। আবার কতক পুরুষ রয়েছে যাদের সন্তোষজনক যৌন সঙ্গমের জন্য অনেকক্ষণ লিঙ্গকে যোনির ভেতরে ক্রমাগতভাবে ঢুকাতে এবং বের করতে হয়। অনেকের ক্ষেত্রে এটি পুরুষাঙ্গে ব্যথার উদ্রেক করতে পারে। যেহেতু এ ধরনের পুরুষদের ইজাকুলেশন বা বীর্যস্খলনে অনেক সময় প্রয়োজন হয় তাই তারা এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কেননা বীর্যস্খলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এরা চরমপুলক লাভ করতে পারে না।
এত কিছুর পরেও সৌভাগ্যের কথা এই যে, পুরুষত্বহীনতা বা যৌন অক্ষমতার জন্য শারীরিক ও মানসিক যে কারণেই দায়ী হোক না কেন উপযুক্ত এবং বর্তমানে প্রচলিত আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়।
কোন কোন ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে
অনেকগুলো মেডিকেল ফ্যাক্টর রয়েছে যেগুলো পুরুষের মাঝে উপস্থিত থাকলে যৌন অক্ষমতা বা পুরুষত্বহীনতার ঝুঁকি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বাড়ে। একটু আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, পুরুষত্বহীনতার জন্য রক্তনালী সম্পর্কীয় নানা অসুখ বা øায়ুবিক বা নার্ভ সম্পর্কীয় অসুখ ইত্যাদি দায়ী থাকতে পারে। যেসকল শারীরিক কারণে পুরুষত্বহীনতার
ঝুঁকি বাড়ে সেগুলোর কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলঃ
ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগঃ যেসকল পুরুষের ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ রয়েছে তাদের অনেকেই পুরুষত্বহীনতায় ভুগে থাকে। গবেষণা সমীক্ষায় প্রতীয়মান হয়েছে যে ডায়াবেটিস রোগ নির্ণীত হওয়ার ৫ বছরের ভেতরে প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষত্বহীনতার অভিজ্ঞতা লাভ করে।
উচ্চ রক্তচাপঃ-যেসকল পুরুষ উচ্চ রক্তচাপে ভোগে তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রক্তনালীর ভেতরের লুমেন্ট বা গহ্বরে কোলেস্টেরল জাতীয় পদার্থ জমা হয়ে ভেতরে স্পেস বা জায়গা কমিয়ে দেয়। ফলশ্র“তিতে পর্যাপ্তপরিমাণ রক্ত এর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না। এ কারণেও ইরেকশন সমস্যা দেখা দিতে পারে:

1 comment: